মিয়ানমারের ১৭৯ বিজিপি সদস্য বিজিবি স্কুলে, শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ ; চলছে ডেটাবেজ তৈরির কাজ

কক্সবাজার প্রতিনিধি :

মিয়ানমারে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সেখানকার বিদ্রোহী বাহিনীর আক্রমণের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির ১৭৯ সদস্যকে কঠোর নিরাপত্তার মাধ্যমে রাখা হয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তবে এ স্কুলে অবস্থানের কারণে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে । আশ্রিতদের স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত না হওয়ায় পাঠদান নিয়ে এখন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। স্কুলটিতে ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে।

এ দিকে আশ্রিত বিজিপি সদস্যদের আঙ্গুলের ছাপসহ নাম-পরিচয়ের ডেটাবেজ তৈরির কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্র জানায়, গত সোমবার বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়নের (১১ বিজিবি) অধীনস্থ জামছড়ি বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকা দিয়ে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অংথাপায়া ক্যাম্প থেকে একে একে ১৭৯ জন বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এরপর অস্ত্র জমা নিয়ে তাদের হেফাজতে নেয় বিজিবি।

এই ১৭৯ জনকে নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন।

তিনি জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্ত এলাকা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্ত রয়েছে। আশ্রিতদের উপজেলা প্রশাসন ও বিজিবির পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। সেখানে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ চলছে বিজিবির তত্ত্বাবধানে। পাশাপাশি তাদের আঙুলের ছাপসহ নাম-পরিচয়ের ডাটাবেজ তৈরির কাজ করা হবে। এরপর তাদের স্বদেশে ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

এ দিকে নাইক্ষ্যংছড়ির প্রবেশমুখ ব্রিজ এলাকায় বিজিবির চেকপোস্ট থেকে কোনো গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। চেকপোস্টে দায়িত্বরত সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে বিজিবি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিস্তারিত জানাবেন বলে ফিরিয়ে দেয়া হয় গণমাধ্যমকর্মীদের।

বিজিবির সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলামের দেয়া তথ্য মতে, পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যরা মিয়ানমার অংথাপায়া ক্যাম্পের। এটি নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে অনুমানিক ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত, যা টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তের নাফ নদীর পূর্বে বলিবাজার এলাকার।

এ দিকে একাধিক সূত্র জানায়, কক্সবাজারের টেকনাফের নাফনদীর ওপারে মিয়ানমারের মংডু শহর। যার সূত্র ১০ কিলোমিটারের বেশি। টানা সংঘাতে মংডুর উত্তর ও দক্ষিণের গ্রামগুলো আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। ফলে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর বেশিভাই সদস্যই পালিয়ে গেছে কালাদান এলাকায়। যেখানে নদী ও পাহাড় বেষ্টিত এলাকায় অবস্থান নিয়েছে সরকারি বাহিনী। যা ঘিরে রেখেছে আরাকান আর্মির যোদ্ধারা।

এ পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের সড়ক, ব্রিজ ভেঙে দেয়া হয়েছে। ফলে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে যাওয়া আরও কঠিন হয়েছে।

রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর নজরদারিতে আছে। এর আগে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাতের জেরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সেনাসহ ৩৩০ জনকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত পাঠানো হয়।

গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জের ধরে ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন বিজিপিসহ ৩৩০ জন।